এবার রাজধানীর এমপিওভুক্ত চারটি স্কুলের কোচিংবাজ ৭২ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) দুর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে গতকাল রবিবার তাঁদের আলাদাভাবে শোকজ করা হয়েছে।
কোচিংবাজ ওই শিক্ষকদের মধ্যে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাতজন ও রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচজন।
মাউশি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে ওই শিক্ষকদের। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাঁদের এমপিও বাতিলেরও চিন্তাভাবনা রয়েছে অধিদপ্তরের।
নোটিশে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানদল কোচিং বাণিজ্যে জড়িত অভিযোগে ঢাকা মহানগরীর ওই চার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তালিকা করে। দুদকের সুপারিশে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২-এর অনুচ্ছেদ ১৩-এর বিধান লঙ্ঘন করায় এসব শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলো।
গত ডিসেম্বরে রাজধানীর আট স্কুলের ৯৭ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছিল দুদক। তাঁদের মধ্যে সরকারি চার স্কুলের ২৪ জন শিক্ষক এবং এমপিওভুক্ত চার স্কুলের ৭৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর একই প্রতিষ্ঠানে থেকে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ করা হয়েছিল। তাই সে সময়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক। এ ছাড়া দুদকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদসচিবকেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী গত ২৯ ডিসেম্বর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়। এবার এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের ৭২ জন শিক্ষককে শোকজ করা হলো।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২ অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন-ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওবিহীন কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন-ভাতাদি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এমপিওবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
এ ছাড়া কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সরকার পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাঠদান অনুমতি, স্বীকৃতি, অধিভুক্তি বাতিল করতে পারবে।
যাঁরা শোকজ খেলেন
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল : মো. নিজাম উদ্দিন কামাল, আব্দুল মান্নান, উম্মে ফাতিমা, মো. আজমল হোসেন, আব্দুল হালিম, গোলাম মোস্তফা, আশরাফুল আলম, সুবাস চন্দ্র পোদ্দার, লাভলী আখতার, তাসমিন নাহার, মতিনুর, উম্মে সালমা, মো. আব্দুল জলিল, মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন, মনিরা জাহান, ফাহমিদা খানম পরী, লুত্ফুন নাহার, হামিদা বেগম, নাজনীন আক্তার, উম্মে সালমা-২, তৌহিদুল ইসলাম, সুরাইয়া জান্নাত, মো. সফিকুর রহমান-৩, মো. শফিকুর রহমান সোহাগ, নুরুল আমিন-২, মনিরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, অহিদুজ্জামান, মাকসুদা বেগম মালা, আলী নেওয়াজ আলম করিম, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুর রব, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. মাহবুবুর রহমান ও মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।
মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ : এনামুল হক, মেজবাহুল ইসলাম, সুবীর কুমার সাহা, মো. সাইফুল ইসলাম, মোহনলাল ঢালী, বাসুদেব সমাদ্দার, বকুল বেগম, আসাদ হোসেন, প্রদীপ কুমার বসাক, আবুল খায়ের, শারমীন খানম, মো. কবীর আহমেদ, খ ম কবীর আহমেদ, মো. দেলোয়ার হোসেন, মাও. কামরুল হাসান, মো. রুহুল আমিন-২, মো. কামরুজ্জামান, শেখ শহীদুল ইসলাম, শুকদেব ঢালী, হাসান মঞ্জুর হিলালী, আমান উল্লাহ আমান, হামিদুল হক খান, রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস ও চন্দন রায়।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ : ড. ফারহানা, শাহনেওয়াজ পারভীন, সুরাইয়া নাসরিন, কামরুন্নাহার চৌধুরী, লক্ষ্মী রানী, ফেরদৌসি ও নুশরাত জাহান।
রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ : এ বি এম মইনুল ইসলাম, মো. আলী আকবর, মো. রেজাউর রহমান, মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
No comments:
Post a Comment